প্রকাশিত:
১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৬:২৮
মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের মাধ্যমে দূরের একটি গ্রহের বায়ুমণ্ডলে প্রাণের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়ার দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। টেলিস্কোপটি এই গ্রহে দ্বিতীয়বারের মতো জীবনের রাসায়নিক উপাদান শনাক্ত করল, যা আগের বারের চেয়েও বেশি নির্ভরযোগ্য বলে মনে করা হচ্ছে।
আজ ১৭ এপ্রিল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, কে২-১৮বি নামের একটি গ্রহের বায়ুমণ্ডলে এমন কিছু রাসায়নিক উপাদান পাওয়া গেছে যা পৃথিবীতে সাধারণত জীবিত জীবের মাধ্যমে উৎপন্ন হয় বলে নিশ্চিত করেছেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক।
গবেষণা দলের প্রধান অধ্যাপক নিক্কু মধুসূদন জানান, এখন পর্যন্ত এটি প্রাণের অস্তিত্বের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রমাণ হতে পারে। আশা করছি এক থেকে দুই বছরের মধ্যে আমরা এটি নিশ্চিত করতে পারব।কী পাওয়া গেছে?
জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের মাধ্যমে কে২-১৮বি গ্রহের বায়ুমণ্ডলে ডাইমেথাইল সালফাইড এবং ডাইমেথাইল ডিসালফাইড নামের দুটি গ্যাসের উপস্থিতির ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। পৃথিবীতে এই গ্যাস দুটি সাধারণত সামুদ্রিক ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন ও ব্যাকটেরিয়া উৎপন্ন করে।
দূরের একটি গ্রহের বায়ুমণ্ডলে প্রাণের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়ার দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা
অধ্যাপক মধুসূদন বলেন, আমরা যে পরিমাণ গ্যাস শনাক্ত করেছি তা পৃথিবীর তুলনায় হাজার গুণ বেশি। যদি এই গ্যাসগুলো প্রাণের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হয়, তাহলে এই গ্রহে প্রাণের ব্যাপক উপস্থিতি থাকা সম্ভব।তবে কি নিশ্চিতভাবে বলা যায় সেখানে প্রাণ আছে?
না, এখনও নয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, যদিও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, তবে এটি এখনও আবিষ্কারের মানদণ্ডে পৌঁছায়নি। গবেষণার বর্তমান ফলাফলটি তিন সিগমা মাত্রায় রয়েছে, যেখানে একটি নিশ্চিত বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের জন্য পাঁচ সিগমা সিগমা মাত্রার প্রয়োজন।
স্কটল্যান্ডের অ্যাস্ট্রোনোমার রয়্যাল ও অধ্যাপক ক্যাথরিন হেইমানস বলছেন, এই গ্যাসগুলো পৃথিবীতে জীবিত জীব দ্বারা তৈরি হয়, কিন্তু আমরা এখনও নিশ্চিত নই যে কে২-১৮বি গ্রহে একই কারণেই এগুলো তৈরি হয়েছে। এই ধরনের গ্যাস ভিন্ন ভিন্ন প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াতেও তৈরি হতে পারে।
কে২-১৮বি গ্রহ
বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, গ্রহটির নিচে হয়তো একটি বিশাল তরল জলের মহাসাগর রয়েছে, কারণ এর বায়ুমণ্ডলে অ্যামোনিয়া গ্যাস অনুপস্থিত। তবে অন্য কিছু গবেষক বলছেন, এটি একটি শিলা-গলানো গ্রহও হতে পারে, যার মধ্যে প্রাণ থাকার সম্ভাবনা নেই। গ্রহটির আকার পৃথিবীর প্রায় আড়াই গুণ। এটি পৃথিবী থেকে প্রায় ৭০০ ট্রিলিয়ন মাইল দূরে অবস্থিত। এটি একটি ছোট, লাল বর্ণের তারার চারপাশে ঘোরে।
নাসার অ্যামস রিসার্চ সেন্টারের বিজ্ঞানী ড. নিকোলাস ওগান বলেন, কে২-১৮বি সম্ভবত একটি ছোট গ্যাসীয় গ্রহ, যার কোন পৃষ্ঠ নেই।অধ্যাপক মধুসূদন বলেন, যদি এটি নিশ্চিত হয় যে কে২-১৮বি গ্রহে প্রাণ রয়েছে, তাহলে আমরা বলতে পারি গ্যালাক্সিতে প্রাণ থাকা খুব সাধারণ ঘটনা।
এই গবেষণা দ্য আস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটারে প্রকাশিত হয়েছে এবং এটি বৈজ্ঞানিক জগতে প্রাণের সন্ধানে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করতে পারে।
মন্তব্য করুন: